বর্তমানে ভারতীয় রোজগার ক্ষেত্র এক আমূল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছে। পরিসংখ্যানবিদরা বলছেন আগামী পাঁচ বছরে ভারতে নতুন রোজগারের সংখ্যা প্রায় ২২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। আর আমাদের দেশের অর্থনীতিও এই বছরেই ছয় শতাংশের মত বৃদ্ধি পেতে চলেছে। এই অগ্রগতির মূলে আছে ভারতীয় বাজারে বিদেশী লগ্নি এবং ভারত সরকারের ‘Make in India’ পরিকল্পনার মত প্রচেষ্টাগুলি।
কিন্তু রোজগার বাড়লে কি হবে! আমাদের দেশের জনসংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যে। জনসংখ্যার দিক থেকে আমরা শীঘ্রই চীনকে টপকাতে চলেছি। সুতরাং কর্মক্ষেত্রে সাঙ্ঘাতিক রকমের প্রতিযোগিতা। যাকে বলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। এই লড়াইয়ে জিততে গেলে হাতে থাকতে হবে তার উপযোগী অস্ত্রশস্ত্র। কিন্তু এই প্রতিযোগিতা তো বাহুবল দেখানোর নয়। দেখাতে হবে মগজের দৌড়। বুদ্ধির বল। আর কিছু দক্ষতা। এই দক্ষতার আবার প্রকারভেদ রয়েছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে দক্ষতা দুই ধরনের - hard skill বা প্রধান দক্ষতা এবং soft skill বা প্রাসঙ্গিক দক্ষতা। এই ধর কেউ ভালো মেশিন বা মোবাইল সারাতে পারে। কেউ ভালো সফটওয়ার বানাতে পারে। অঙ্ক করতে পারে। এইগুলো হল হার্ড স্কিল বা প্রধান দক্ষতা – যেগুলি মানুষ তাদের প্রথাগত পাঠ্যক্রম থেকে শেখে। কিন্তু সাফল্য পেতে গেলে এই প্রধান দক্ষতার সাথে সাথে আরও কিছু প্রাসঙ্গিক দক্ষতারও প্রয়োজন। সেগুলো কিরকম? যেমন - ভালভাবে মানুষজনকে বুঝিয়ে বলা। সবার থেকে সেরা কাজ বার করে আনা। সামনে থেকে কাজ করে নিজের দলকে নেতৃত্ব দেওয়া। সবরকম পরিস্থিতিতে নিজের মানসিক সন্তুলন ও চারিত্রিক অখণ্ডতা বজায় রাখা। একই সঙ্গে অনেক রকমের কাজ করা। এই সব আর কি!
এখন ব্যপার হচ্ছে আমাদের দেশের অধিকাংশ ক্লাসরুমে অঙ্ক, বিজ্ঞান, ভূগোল ইত্যাদি প্রথাগত বিষয় পড়ানোর দিকে বেশ জোর দেওয়া হয়। এই সব বিষয়ের নিয়মিত মূল্যায়নও করা হয়। অর্থাৎ আমাদের hard skill এর দিকে ভালো নজর দেওয়া হয়। কিন্তু ওই যে soft skill এর কথা বললাম, সেগুলোকে একেবারেই পাত্তা দেওয়া হয় না। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেকে প্রমাণ করতে হলে এই soft skill গুলোকেও ভালো করে ঘষা মাজা করতে হবে। এই প্রাসঙ্গিক দক্ষতার ভিত্তিতেই কারো কারো চাকরী হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ধরা যাক, একটি চাকরীর পরীক্ষায় দুজন প্রতিযোগী সমান নাম্বার পেল। কিন্তু ইন্টারভিউতে একজন খুব সাবলীল ভাবে কথা বলল, শান্তভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করল। আর অন্যজন তাড়াতাড়ি বলতে গিয়ে খেই হারিয়ে থেমে গেল। তোমাদের মনে হয় কে চাকরি পাবে? সুতরাং আমাদের বইয়ের পড়াশোনা ছাড়াও এইসব দক্ষতা গুলোর দিকে নিয়মিত নজর দিতে হবে।
ভালো কথা বলার ক্ষমতা, সাবলীল ভাবে মনের ভাব প্রকাশ তোমাদের জব মার্কেটে অনেকটা এগিয়ে দেবে। যারা তোমাদের চাকরিতে নিয়োগ করবে তারা দেখবে কিভাবে তোমরা কথা বলে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারছ। কিভাবে তোমরা তোমাদের অন্য সহকর্মীদের সাথে ব্যবহার করছ। এইসব যেমন তোমাদের নিজের ব্যক্তিগত জীবনে প্রভাব ফেলবে, তেমনই তোমরা যে সংস্থানে চাকরি করবে তার অগ্রগতিতেও। সেই কারণেই অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে সাবলীল ভাব আদানপ্রদান না থাকার জন্য অনেককেই কোম্পানি ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়। সেটা ওই কোম্পানির ভাবী ভবিষ্যৎ এবং লাভের কথা ভেবেই করা হয়।
তোমরা তোমাদের আশেপাশে দেখবে অনেকেই পড়াশোনায় ভালো হওয়া সত্ত্বেও ভালো চাকরি পাচ্ছে না। বা ইন্টারভিউতে বারবার কেটে যাচ্ছে। কেন? একটা কারণ হতে পারে যে তারা নিজের মনের ভাব ঠিকমত গুছিয়ে বলতে পারছে না। এই ভালোভাবে কথা বলাটা একটা আর্ট। পড়াশোনার মত এটাও শিখতে হয়। না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়। আমাদের সিলেবাসে তো হাজার রকমের মাল্টিপল চয়েস প্রশ্ন, প্রবন্ধ রচনা, ইত্যাদি ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু কয়টা স্কুলে ছেলেদের বক্তৃতা দেওয়া বা বিতর্ক করা শেখানো হয়। খুব কম স্কুলেই। তাই না? কিন্তু একটি ছাত্র বা ছাত্রীর সর্বাঙ্গীণ উন্নতির কথা ভাবলে এইসব দক্ষতাকেও সিলেবাসের মধ্যে আনতে হবে। এগুলির চর্চা করতে হবে।
আমাদের দেশের গ্রামের ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে করে যারা ইংরাজি মাধ্যমে পড়াশোনা করেনি, তাদের আর এক রকমের সমস্যা। তারা অঙ্ক বিজ্ঞানে তুখোড় হলেও, ভালো করে বা স্পষ্ট ভাবে ইংরাজি বলতে পারে না। এর ফলে তারা একটা হীনমন্যতায় ভোগে। যার ফল কিন্তু সুদূরপ্রসারী হতে পারে। তাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। তারা সাফল্যের শিখায় পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু এই সমস্যার সমধান কিভাবে সম্ভব?
এই সব সমস্যার কথা ভেবেই আমাদের ধী ফাউন্ডেশন অনেকগুলি কোর্স নিয়ে এসেছে। এই কোর্সগুলি অষ্টমশ্রেণী থেকে শুরু করে কলেজস্তর পর্যন্ত যে কেউ করতে পারে। আমাদের এই সংস্থার উদ্দেশ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই সফট স্কিলগুলো সম্পর্কে একটা সচেতনতা তৈরি করা, তাদের বর্তমান কর্মক্ষেত্রের উপযোগী করা তোলা, এবং নিজেদের ভাবনা চিন্তায় পরিপূর্ণতা আনা। কাজটা সোজা নয়।
আমাদের English Proficiency কোর্সটিতে আমরা কিভাবে সাবলীলভাবে ইংরাজিতে কথা বলা যায় সেটার ওপর জোর দিই। কিভাবে ইংরাজিতে কথা শুনে কে কতটা বুঝতে পারছে সেটার উপর মূল্যায়ন হয়। এর জন্য আমরা প্রথমে ছাত্রছাত্রীদের গ্রামার এবং ইংরাজি শব্দভাণ্ডার মজবুত করার চেষ্টা করি। তারপর তাদের ধীরে ধীরে ইংরাজিতে কথা বলার ভীতি কাটানো হয়, এবং ইংরাজিতে সাবলীল করা হয়। আর এই কাজে সাহায্য নেওয়া হয় সারা পৃথিবীর বিশেষজ্ঞদের, বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ ইত্যাদি ইংরেজি ভাষাভাষীর দেশের মানুষের, যারা মাঝে মাঝেই ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথোপকথন করে তাদের গ্লোবাল ইংরেজি কথোপকথনে পারদর্শী করে তুলতে সাহায্য করে।
আর আমরা সাহায্য নিই এক আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির। এই পদ্ধতিতে আমারা পড়ুয়াদের নিয়মিতভাবে বিতর্কে, গল্প বলায়, তাৎক্ষনিক বক্তৃতায় নিয়োজিত করি। কখনও আবার তাদের বিশেষ কোন চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হয়। বলা হয় কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে কথোপকথনের জন্য। এই ধরনের পদ্ধতি প্রচলিত পদ্ধতির থেকে অনেকটাই আলাদা। এতে পুরো ব্যাপারটা বেশ আনন্দদায়ক, কৌতুকপূর্ণ এবং সর্বোপরি সহজ হয়ে যায়। আমাদের এই কোর্সের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ভাষার প্রতি একটা ভালবাসা তৈরি হয়। ভাষা যেন পারস্পরিক যোগাযোগ স্থাপনের একটা মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। ব্যবধান হিসাবে নয়। আমাদের এই অভিনব পদ্ধতি প্রয়োগ করে আমরা ইতিমধ্যেই প্রায় ২৫০ পড়ুয়ার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সফল হয়েছি। বলা বাহুল্য তাদের আধুনিক কর্মক্ষেত্রের উপযোগী করে তুলতে পেরেছি।
তাই আমাদের ধী-প্রতিষ্ঠানের মাসিক ব্লগের দিকে নিয়মিত নজর রাখুন। আর কিভাবে আমরা ছাত্রছাত্রীদের অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে শিক্ষিত করে দেশ ও দশের উপযোগী করে তুলি তার সাক্ষী থাকুন ।
Keywords: Communication, English Proficiency, Career Growth, Job Interviews, Dhi-e Foundation
Contributed by: Premashis Manna, PhD & Tufan K Mukhopadhyay, PhD
Published by: Dhi-e Foundation (www.dhi-e.org)
Edited by: Swarup Dey, PhD
Background Image source: https://www.digits.co.uk/
Comments